কোরআনে ইখলাস সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াতসমূহ



আল্লাহর জন্য দ্বীনকে খালেস করণ

(১) “বল, ‘তোমরা কি আমাদের সাথে আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করছ অথচ তিনি আমাদের রব ও তোমাদের রব? আর আমাদের জন্য রয়েছে আমাদের আমলসমূহ এবং তোমাদের জন্য তোমাদের আমলসমূহ এবং আমরা তাঁর জন্যই একনিষ্ঠ।” [ সূরা বাকারা : ১৩৯ ]

(২) “বল, ‘আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন আর তোমরা প্রত্যেক সিজদার সময় তোমাদের চেহারা সোজা রাখবে এবং তাঁরই ইবাদাতের জন্য একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকবে’। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে তোমরা (প্রথমে) ফিরে আসবে।” [ সূরা আল- আ’রাফ : ২৯ ]

(৩) “নিশ্চয় আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাযিল করেছি; অতএব আল্লাহর ‘ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।” (২) “জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘ধামরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” (৩) [ সূরা আয-যুমার : ২ – ৩ ]

(৪) “বল, ‘নিশ্চয় আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আমি যেন আল্লাহর ইবাদাত করি তাঁর-ই জন্য আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করে।” (১১) “আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন আমি প্রথম মুসলিম হই।” (১২) [ সূরা আয – যুমার : ১১ – ১২ ]

(৫) “বল, ‘আমি আল্লাহর-ই ইবাদাত করি, তাঁরই জন্য আমার আনুগত্য একনিষ্ঠ করে।” (১৪) “অতএব তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য যা কিছুর ইচ্ছা তোমরা ‘ইবাদাত কর’। বল, ‘নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত যারা কিয়ামত দিবসে নিজদেরকে ও তাদের পরিবারবর্গকে ক্ষতিগ্রস্ত পাবে। জেনে রেখ, এটাই স্পষ্ট ক্ষতি।” (১৫) [ সূরা আয – যুমার : ১৪ – ১৫ ]

(৬) “তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য রিয্ক পাঠান। আর যে আল্লাহ অভিমুখী সে-ই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।” (১৩) “সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক, তাঁর উদ্দেশ্যে দীনকে একনিষ্ঠভাবে নিবেদিত করে। যদিও কাফিররা অপছন্দ করে।” (১৪) [ সূরা গাফির : ১৩ – ১৪ ]

(৭) “তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা দীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে তাঁকে ডাক। সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি সৃষ্টিকুলের রব।” [ সূরা গাফির : ৬৫ ]

(৮) “আর কিতাবীরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই কেবল মতভেদ করেছে।” (৪) “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।” (৫) [ সূরা – আল বায়্যিনাহ : ৪ – ৫ ]

(৯) “নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।” (১৪৫) “তবে যারা তাওবা করে নিজদেরকে শুধরে নেয়, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে এবং আল্লাহর জন্য নিজদের দীনকে খালেস করে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে। আর অচিরেই আল্লাহ মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।” (১৪৬) [ সূরা আন – নিসা : ১৪৫ – ১৪৬ ]

(১০) “তিনিই তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় থাক, আর তা তাদেরকে নিয়ে চলতে থাকে অনুকূল হাওয়ায় এবং তারা তা নিয়ে আনন্দিত হয়, (এ সময়) তাকে পেয়ে বসে ঝড়ো হাওয়া, আর চারদিক থেকে ধেয়ে আসে তরঙ্গ এবং তাদের নিশ্চিত ধারণা হয় যে, তাদেরকে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, ‘যদি আপনি এ থেকে আমাদেরকে নাজাত দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।” [ সূরা ইউনুস : ২২ ]

(১১) “তারা যখন নৌযানে আরোহন করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা র্শিকে লিপ্ত হয়।“ (৬৫) “যাতে আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা তারা অস্বীকার করতে পারে এবং তারা যেন ভোগÑবিলাসে মত্ত থাকতে পারে। অতঃপর শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।” (৬৬) [ সূরা আল – আনকাবুত : ৬৫ – ৬৬ ]

(১২) “তুমি কি দেখনি যে, নৌযানগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।” (৩১) আর যখন ঢেউ তাদেরকে ছায়ার মত আচ্ছন্ন করে নেয়, তখন তারা একনিষ্ঠ অবস্থায় আনুগত্যভরে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তাদের কেউ কেউ (ঈমান ও কুফরীর) মধ্যপথে থাকে। আর বিশ্বাসঘাতক ও কাফির ব্যক্তি ছাড়া কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না।” (৩২) [ সূরা লুকমান : ৩১ – ৩২ ]

(১৩) “আর তারা (মক্কাবাসীরা) বলত, (১৬৭) ‘যদি আমাদের কাছে পূর্বর্তীদের মত কোন উপদেশ (কিতাব) থাকত, (১৬৮) তাহলে অবশ্যই আমরা আল্লাহর মনোনীত বান্দা হতাম’। (১৬৯) অতঃপর তারা তা অস্বীকার করল অতএব শীঘ্রই তারা জানতে পারবে (এর পরিণাম)।” (১৭০) [ সূরা আস – সাফ্ফাত : ১৬৭ – ১৭০ ]


মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজ পছন্দণীয় বান্দাদেরকে খালেস করণ :


১. নবীগণ : –

(১৪) আর সে মহিলা তার প্রতি আসক্ত হল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত, যদি না তার রবের স্পষ্ট প্রমাণ প্রত্যক্ষ করত। এভাবেই, যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দেই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা ইফসুফ:২৪]

(১৫) আর স্মরণ কর এই কিতাবে মূসাকে। অবশ্যই সে ছিল মনোনীত এবং সে ছিল রাসূল, নবী। ( সূরা মরিয়ম : ৫১ )

(১৬) আর স্মরণ কর আমার বান্দা ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়া‘কূবকে। তারা ছিল শক্তিমান ও সূক্ষ্মদর্শী। ( ৪৫ ) নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিশেষ করে পরকালের স্মরণের জন্য নির্বাচিত করেছিলাম। ( ৪৬ ) ( সূরা সা’দ : ৪৫ – ৪৬ )


২. দুনিয়া কিংবা আখেরাতের আযাব অথবা ইবলীসের প্রতারণা থেকে নাজাতপ্রাপ্ত মু’মিনগণ :-

(১৭) “সে বলল, ‘হে আমার রব, তাহলে আমাকে অবকাশ দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’। (৩৬) তিনি বললেন, ‘তুমি নিশ্চয় অবকাশপ্রাপ্তদের একজন’। (৩৭) ‘নির্ধারিত সময়ের দিন পর্যন্ত’। (৩৮) সে বলল, ‘হে আমার রব, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই যমীনে আমি তাদের জন্য (পাপকে) শোভিত করব এবং নিশ্চয় তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব’। (৩৯) তাদের মধ্য থেকে আপনার একান্ত বান্দাগণ ছাড়া।” (৪০) [ সূরা হিজর : ৩৬ – ৪০]

(১৮) “অবশ্যই তোমরা যন্ত্রণাদায়ক আযাব আস্বাদন করবে। (৩৮)আর তোমরা যে আমল করতে শুধু তারই প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হবে। (৩৯) অবশ্য আল্লাহর মনোনীত বান্দারা ছাড়া; (৪০)তাদের জন্য থাকবে নির্ধারিত রিয্ক, (৪১) ফলমূল; আর তারা হবে সম্মানিত, (৪২) নিআমত-ভরা জান্নাতে।” (৪৩) [ সূরা আস – সাফ্ফাত : ৩৮ – ৪৩ ]

(১৯) “নিশ্চয় এরা নিজদের পিতৃপুরুষদেরকে পথভ্রষ্ট পেয়েছিল; (৬৯)ফলে তারাও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে দ্রুত ছুটেছে। (৭০) আর নিশ্চয় এদের পূর্বে প্রাথমিক যুগের মানুষের বেশীরভাগই পথভ্রষ্ট হয়েছিল। (৭১) আর অবশ্যই তাদের কাছে আমি সতর্ককারীদেরকে পাঠিয়েছিলাম; (৭২) সুতরাং দেখ, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের পরিণতি কী হয়েছিল! (৭৩) অবশ্য আল্লাহর মনোনীত বান্দারা ছাড়া।“ (৭৪) [ সূরা আস – সাফ্ফাত : ৬৯ – ৭৪ ]

(২০) “আর ইলিয়াসও ছিল রাসূলদের একজন। (১২৩) যখন সে তার কওমকে বলেছিল ‘তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না’? (১২৪) তোমরা কি ‘বা’ল’ কে ডাকবে এবং পরিত্যাগ করবে সর্বোত্তম সৃষ্টিকর্তা (১২৫) আল্লাহকে, যিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদেরও রব’? (১২৬) কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল, ফলে তাদেরকে অবশ্যই (আযাবের জন্য) উপস্থিত করা হবে। (১২৭) আল্লাহর (আনুগত্যের জন্য) মনোনীত বান্দাগণ ছাড়া।” [ সূরা আস সাফ্ফাত : ১২৩ -১২৮]

(২১) নাকি তোমাদের কোন সুস্পষ্ট দলীল- প্রমাণ আছে? (১৫৬) অতএব, তোমরা সত্যবাদী হলে তোমাদের কিতাব নিয়ে আস। (১৫৭) আর তারা আল্লাহ ও জিন জাতির মধ্যে একটা বংশসম্পর্ক সাব্যস্ত করেছে, অথচ জিন জাতি জানে যে, নিশ্চয় তাদেরকেও উপস্থিত করা হবে। (১৫৮) আল্লাহ সে সব থেকে অতিপবিত্র ও মহান, যা তারা আরোপ করে (১৫৯) তবে আল্লাহর (আনুগত্যের জন্য) নির্বাচিত বান্দাগণ ছাড়া। (১৬০) [ সূরা আস – সাফ্ফাত : ১৫৬ – ১৬০ ]

(২২) “সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’ (৭৯) তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে- (৮০) ‘নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ (৮১) সে বলল, ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব।’ (৮২) তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।” (৮৩) [ সূরা সা’দ : ৭৯ – ৮৩ ]

(২৩) পবিত্র কোরআনে অর্থগতভাবে ইখলাস সর্ম্পেকে অবতীর্ণ আয়াতসমূহ: “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। (১)আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।) (২)তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি । (৩)আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই।“ (৪) [ সূরা ইখলাস : ১ – ৪ ]

No comments:

Post a Comment

সম্পর্কিত পোষ্টসমূহ