নির্বাচিত ১০০ হাদীস



১/১০০. হযরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:

"ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর স্থাপিত (এগুলো হল) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত আদায় করা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমাযানের ছিয়াম পালন করা।"

- [বুখারীঃ ৭]


২/১০০. হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন:

"যার মধ্যে তিনটি গুণ রয়েছে সে ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে, (ক) তার কাছে অন্য সবার তুলনায় আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) প্রিয়তর হয়, (খ) কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসে, (গ) আগুনে ফিরে যাওয়াকে যেমন অপ্রিয় জানে, কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে তেমন অপ্রিয় মনে করে।"

- [বুখারীঃ ১৫]


৩/১০০. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

"প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ্ দেয়া অবশ্য কর্তব্য। দু'জন মানুষের মাঝে ইনসাফ করা হচ্ছে সাদকাহ্, কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ্, ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ্, সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ্ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ্।"

- [বুখারী: ২৯৮৯, মুসলিম: ১০০৯]


৪/১০০. আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

“বান্দা যখন সিজদায় থাকে তখন তার রবের সবচাইতে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (সিজদায় গিয়ে) বেশি করে দু’আ কর।”

- [মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন- ১৪৯৮]


৫/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল (স.) বলেছেন:

“যে তার হালাল রোযগার থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করবে (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ হালাল বস্তু ছাড়া কিছুই গ্রহন করেন না। আর আল্লাহ তা তার ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তার দানকারীর জন্য তা প্রতিপালন করতে থাকেন যেরূপ তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করতে থাকে। অবশেষে একদিন তা পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায়।”

- [সহীহুল বুখারী হা/৭৪৩০, ১৪১০: (তাওহীদ প্রকাশনী); সহীহুল মুসলিমঃ ২২১১]


৬/১০০. আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবনুূ সাখর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’

- [সহীহুল বুখারী ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪]


৭/১০০. আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ) আমাকে বলেছেন:

"তুমি পূণ্যের কোন কাজ কে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করতে পার।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ১২৩, মুসলিম- ২৬২৬, তিরমিযী- ১৮৩৩, ইবনে মাজাহ- ৩৩৬২, দারেমী- ২০৭৯]


৮/১০০. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন:

"তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যায়ঃ আত্মীয়-স্বজন, তার মাল ও তার আ'মল। অতঃপর দুটি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে যায়। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার মাল ফিরে আসে এবং তার আ'মল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়।"

- [রিয়াদুস সালেহীন- ১০৬, বুখারী- ৬৫১৪, মুসলিম- ২৯৬০, তিরমিযী- ২৩৭৯, নাসায়ী- ১৯৩৭, আহমাদ- ১১৬৭০]


৯/১০০. আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন:

“মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ- “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদাহ- ১৭)"

- [সহীহুল বুখারী- ৩২৪৪, ৪৭৭৯,৪৭৮০]


১০/১০০. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সঃ) তাঁর মহান প্রভু হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন:

"যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দুই হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ৯৭, বুখারী-৭৫৩৬,৭৪০৫, ৭৫২৭, মুসলিম-২৬৭৫, তিরমিযী-২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনে মাজাহ-৩৮২২, আহমাদ-৭৩৭৪, ২৭৪০৯, ৮৪৩৬]


১১/১০০. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন:

"আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ৪০; বুখারী-৫৬৪৫, আহমাদ-৭১৯৪, মুওয়াত্তা মালেক-১৭৫২]


১২/১০০. আবু সাঈদ (রাঃ) ও আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন:

"মুসলিমকে যে কোন ক্লান্তি, অসুখ, চিন্তা, শোক এমনকি (তার পায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ৩৮; সহীহ বুখারী-৫৬৪২, সহীহ মুসলিম-২৫৭৩, তিরমিযী-৯৬৬, আহমাদ-৭৯৬৯, ৮২১৯, ৮৯৬৬, ১০৬২৪]


১৩/১০০. ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন:

"যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যাকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দুটি উপত্যকা হোক। মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ন করতে পারবে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ২৪; সহীহ বুখারী-৬৪৩৬, ৬৪৩৭, মুসলিম-১০৪৯, তিরমিযী-৩৭৯৩, ৩৭৯৮, আহমাদ-৩৪৯১, ২০৬০৭, ২০৬৯৭]


১৪/১০০. আবু হামযা আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন:

"আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার তাওবা করার জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।"

- [রিয়াদুস সালেহীনঃ ১৬; সহীহ বুখারী-৬৩০৯, মুসলিম-২৭৪৭, আহমাদ-১২৮১৫]


১৫/১০০. হারিসা ইবনে ওহব(রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(সা:)কে বলতে শুনেছি:

“আমি কি তোমাদের দোজখীদের বিষয়ে জানাব না? তারা হলো : প্রত্যেক অহংকারী, সীমালংঘনকারী, অবিনয়ী ও উদ্ধত লোক।”

- [বুখারী, মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ৬১৪]


১৬/১০০. আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম (সা) বলেন:

"অতি ঝগড়াটে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ব্যক্তি ।"

- [বুখারী, মুসলিম, আস-সহীহা: ৩৯৭০]


১৭/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"নিশ্চয় জান্নাতে (কোন) ব্যক্তির মর্যাদা (অনেক) বৃদ্ধি করা হবে। সে বলবে, আমার জন্য কিভাবে এটা হলো? অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার জন্য তোমার সন্তানের (ক্ষমা প্রার্থনা) ইস্তেগফার করার কারণে।"

- [ইবনু মাজাহ, আহমাদ, আস-সহীহা: ১৫৯৮]


১৮/১০০. আনাস (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"যখন কোন বান্দা তার ভাইয়ের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ করতে আসে তখন আসমানে এক ঘোষক ঘোষণা করেন যে, তোমার মঙ্গল হোক এবং জান্নাত তোমার জন্য উত্তম হোক। আর আল্লাহ তা'আলা আরশের ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দা আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছে । আমার জন্য তার মেহমানদারী করা আবশ্যক। আমি জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছু দ্বারা তার মেহমানদারী করতে নারাজ।"

- [আস-সহীহা: ২৬৩২]


১৯/১০০. ইবনু উমার (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"মুমিনগণ সহজ সরল ও নম্র-ভদ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। গৃহপালিত উট যেমন (শান্ত-শিষ্ট হয়ে থাকে), যদি তাকে থামানো হয় তবে সে থেমে যায়। আর যদি চালানো হয় তবে চলে। যদি তুমি তাকে পাথরের উপর বসাও তবুও সে বসে।"

- [আস-সহীহা: ৯৩৬]


২০/১০০. মিকদাম ইবনু মা'দী কারিব (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"যখন তোমাদের কেউ তার (অপর মুসলিম) ভাইকে ভালোবাস, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালোবাসে।"

- [আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনু হিব্বান, আস-সহীহা: ৪১৭]


২১/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"যখন তিনজন ব্যক্তি একত্রে থাকে, তখন যেন তৃতীয় জনকে রেখে দু'জন কানে কানে কথা না বলে।"

- [মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহা: ১৪০২]


২২/১০০. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"যখন রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে তখন বাচ্চাদের (ঘর থেকে বের হতে) বাধা দিবে। কারণ, শাইত্বান ঐ সময় ছড়িয়ে পড়ে। যখন ইশার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায় তখন তাদের ছেড়ে দিবে।"

-[বুখারী, আস-সহীহা: ৪০]


২৩/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,

"মানুষের মধ্যে প্রিয় ঐ ব্যক্তি, যে চাওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষমতা দেখায়। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কৃপণ ঐ ব্যক্তি যে সালামের ক্ষেত্রে কৃপণতা দেখায়।"

- [ইবনু হিব্বান, আস-সহীহা: ৬০১]


২৪/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছেন যে,

"নিশ্চয় মানুষ এমন (কিছু) বাক্যের দ্বারা কথা বলে, এর দ্বারা সে জাহান্নামের মধ্যে এমন এক দূরত্বে পতিত হয়, যার দূরত্ব হবে পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত।"

- [মুসনাদে আহমদ, আস-সহীহা: ৫৪০]


২৫/১০০. ইবনু আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"ঐ ব্যক্তি (প্রকৃত) মুমিন নয়; যে পরিতৃপ্ত থাকে আর পাশে তার প্রতিবেশী ক্ষুদার্থ থাকে।"

- [ইবনে আবী শায়বা, হাকিম, আস-সহীহা: ১৪৯]


২৬/১০০. ইবনু মাসউদ (রা) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন,

"নারী হচ্ছে গোপন বস্তু। যখন সে বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে নগ্নতার প্রতি ক্ষিপ্ত করে তুলে।"

- [তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৩১০৯]


২৭/১০০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রসূল (সা) বলেছেনঃ

"লজ্জা হচ্ছে ঈমান। ঈমান হচ্ছে জান্নাত লাভের মাধ্যম।"

- [আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৪৮৫৫]


২৮/১০০. উমার (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেনঃ

"অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে, তৃতীয় জন হবে শয়তান।"

- [তিরমিযী, মিশকাত হা/ ২৯৮৪]


২৯/১০০. ইবনু উমর (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ

"তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না- (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) বাড়ীতে বেহায়াপনার সুযোগ প্রদানকারী (দাঈয়ুস) (৩) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী।"

- [নাসাঈ হা/২৫৬২; তারগীব হা/২৯৬৫]


৩০/১০০. আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ

"পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট, আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট।"

- [তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৪৭১০]


৩১/১০০. আবু উমামাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর মানুষের ফরয-নফল ইবাদাত আল্লাহ কবুল করেন না।

১. পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি,
২. খোটাদানকারী,
৩. ভাগ্য অস্বীকারকারী ।

- [তারগীব হা/ ৩৫৭৩]


৩২/১০০. মু'আয ইবনে জাবাল (রা) বলেন, রাসূল (সা) আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তিন বলেছেনঃ

(১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে নিহত করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
(২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদি তারা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ও মাল-মাত্তা ছেড়ে যেতে বলেন।
(৩) ইচ্ছা করে কখনও ফরয সালাত ছাড়বে না। কেননা যে ইচ্ছা করে ফরয সালাত ছেড়ে দেয়, তার (হেফাজতের) পক্ষে আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব উঠে যায়।
(৪) কখনও শরাব পান করবে না। কেননা তা সসমস্ত অশ্লীলতার মূল।
(৫) সাবধান! গোনাহ হতে বেঁচে থাকবে । কেননা গোনাহ দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ পৌঁছে থাকে।
(৬) খবরদার! জিহাদ হতে পলায়ন করবে না! যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়।
(৭) যখন লোকের মধ্যে মহামারী দেখা দিবে আর তুমি সেখানে থাকবে, তখন তথায় অবস্থান করবে (পলায়ন করবে না)।
(৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (কার্পণ্য করে তাদের ভরণ-পোষণে কষ্ট দিবে না)।
(৯) তাদের (পরিবারের লোকদের) আদব-কায়দা শিক্ষা দান ব্যাপারে শাসন হতে কখনও বিরত থাকবে না ।
(১০) এবং আল্লাহ সম্পর্কে তাদের ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে।

- [আহমাদ, মিশকাত হা/ ৫৫]


৩৩/১০০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বেঁচে থাক। সাহাবীগণ বললেন, সেগুলো কী? রাসূল (সা) বলেন:

(১) শিরক করা
(২) যাদু করা
(৩) অবৈধভাবে মানুষ হত্যা করা
(৪) সূদ ভক্ষণ করা
(৫) ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা
(৬) যুদ্ধে মাঠ হতে পালিয়ে যাওয়া এবং
(৭) নিরীহ সতীসাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।

- [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭]


৩৪/১০০. আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, তোমরা আমার থেকে ছয়টি জিনিস গ্রহণ কর, আমি তোমাদের জন্য জান্নাত এর ব্যবস্থা করবো।

(১) তোমাদের কেউ কথা বললে মিথ্যা বলবে না,
(২) ওয়াদা করলে খেলাফ করবে না,
(৩) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করবে না,
(৪) (বেগানা নারী-পুরুষ হতে) চক্ষু নীচু রাখো,
(৫) (অন্যায় কর্ম থেকে) হাত বিরত রাখো,
(৬) লজ্জাস্থান হিফাযতে রাখো।

- [বায়হাকী, তারগীব হা/ ৪১৭৮]


৩৫/১০০. আবু যার (রা) বলেন, নবী করিম (সা) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না, তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না, বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আবু যার (রা) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! তারা কারা?

রাসূল (সা) বললেন,

(১) গিঁটের নিচে কাপড় পরিধানকারী,
(২) অনুগ্রহ করে প্রকাশকারী,
(৩) মিথ্যা কসমের মাধ্যমে মাল বিক্রয়কারী।

- [মুসলিম, মিশকাত হা/ ২৬৭৩]


৩৬/১০০. আবু ওমামা বাহেলী (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ

আল্লাহর নিকট দুটি ফোঁটা এবং দুটি চিহ্নের চেয়ে প্রিয় কিছু নেই।

১. আল্লাহর ভয়ে চক্ষু হতে প্রবাহিত পানির ফোঁটা,
২. আল্লাহর রাস্তায় প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা।

আর প্রিয় (দুটি) চিহ্ন হচ্ছে-

১. আল্লাহর পথে জখমের চিহ্ন,
২. আল্লাহর ফরয আদায় করতে করতে পায়ে বা কপালের চিহ্ন।

- [তিরমিযী, আত তারগীব হা/ ৪৭১৭]


৩৭/১০০. মু'আবিয়া ইবনু হায়দা (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেনঃ

তিন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যাদের চক্ষু জাহান্নাম দেখবে না।

১. যারা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়,
২. যারা আল্লাহর ভয়া কাঁদে,
৩. যারা বেগানা নারীকে দেখে চক্ষু নীচু করে।

- [আত তারগীব হা/ ৪৭১৩]


৩৮/১০০. আলী (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, এক মুমিনের উপর অপর মুমিনের ছয়টি হক্ব রয়েছে=

(১) যখন কোন মুসলিমের সাথে সাক্ষাত হবে তখন সালাম দিবে,
(২) কেউ দাওয়াত দিলে তার ডাকে সাড়া দিবে,
(৩) যখন কেউ হাঁচি দিবে তার উত্তর দিবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে),
(৪) কোন মুসলিম অসুস্থ হলে তার খোঁজ-খবর নিবে,
(৫) কোন মুসলিমের মৃত্যু হলে তার জানাযায় শরীক হবে এবং
(৬) নিজের জন্য যা পছন্দের করবে অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করবে।

- [তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৪৪৩৮]


৩৯/১০০. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন:

"যার অন্তরে সরিষা সমপরিমাণ ঈমান আছে, সে জাহান্নামে যাবে না। আর যার অন্তরে সরিষা সমপরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে যাবে না।"

- [মুসলিম, মিশকাত হা/ ৫১০৮]


৪০/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

"মুসলমান যখন মসজিদের দিকে রওনা হয় সে তার ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত তার প্রতি কদমে আল্লাহ একটি নেকী দান করেন এবং একটি করে গোনাহ মোচন করেন।"

- [আত তারীখুল কাবীর, আস-সহীহা হা/ ১০৬৩]


৪১/১০০. জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) আমাদেরকে চারটি কাজের আদেশ ও পাঁচটি কাজ থেকে নিষেধ করেছেন:

(১) যখন ঘুমাবে দরজা বন্ধ করবে,
(২) মশকের মুখ বেঁধে রাখবে,
(৩) পাত্র ঢেকে রাখবে,
(৪) বাতি নিভিয়ে দিবে। কারণ শয়তান (বদ্ধ) দ্বার খুলতে পারে না, (বন্ধ) মশক খুলতে পারে না এবং (ঢাকা) পাত্র উন্মুক্ত করতে পারে না । আর দুষ্ট ইঁদুর গৃহবাসীসহ ঘর পুড়িয়ে ফেলতে পারে।

(ক) বাম হাতে খাবে না,
(খ) বাম হাতে পান করবে না,
(গ) এক পায়ে জুতা পরিধান করে হাটবে না,
(ঘ) ইশতেমালুস সাম্মা (চাদরের দু'মাথা বিপরীত দিক থেকে কাঁধের উপরে তুলে শরীর জড়িয়ে পরিধান করা) অবস্থায় চাদর পরিধান করবে না,
(ঙ) লুঙ্গি পড়ে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে নিতম্ব মাটিতে রেখে হাটুদ্বয় খাড়া করে একটি কাপড় দ্বারা হাটুদ্বয়কে জড়িয়ে বসবে না।

- [ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহা হা/ ২৯৭৪]


৪২/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি জিহাদ না করে বা জিহাদের কামনা পোষণ না করে মারা যায় সে মুনাফিক্বী অংশ বিশেষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মারা যাবে।"

- [মুসলিমঃ ১৯১০; নাসায়ীঃ ৩০৯৭; বুলুগুল মারামঃ ১২৫৯]


৪৩/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত:

"নিশ্চয়ই আল্লাহ (এমন) দুই ব্যক্তিকে দেখে হাসেন যারা একজন অপরজনকে হত্যা করে, অতঃপর আল্লাহ তা'আলা উভয়কে জান্নাতে প্রবেশ করান। তাদের একজন কাফির, যে অপরজনকে হত্যা করে । এরপর সে ইসলাম কবুল করে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে নিহত হয়।"

- [মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহা হা/ ২৫২৫]


৪৪/১০০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসুল (সা) বলেছেন,

“সাত শ্রেণীর লোককে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা তাঁর ছায়া দিবেন, যেদিন (বিচার দিবসে) তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না।

(০১) ন্যায় পরায়ণ শাষক,
(০২) সেই যুবক যে আল্লাহর ইবাদতে বড় হয়েছে,
(০৩) সে ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে, সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর তথায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত,
(০৪) এমন দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পরকে ভালোবাসে । আল্লাহুর ওয়াস্তে উভয়ে মিলিত হয় এবং তাঁর জন্যই পৃথক হয়ে যায়,
(০৫) এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে আর তাঁর চক্ষু অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে,
(০৬) এমন ব্যক্তি যাকে কোন সভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে আর সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং
(০৭) সে ব্যক্তি যে গোপনে দান করে এমনকি তাঁর বাম হাত জানতে পারে না তাঁর ডান হাত কি দান করে।”

- [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৬৪৯]


৪৫/১০০. আবু আইয়ুব (রা) হতে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"কোন লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই- এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু'জনের দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম লোক।"

- [বুখারীঃ ৬২৩৭, মুসলিমঃ ২৫৬০, বুলুগুল মারামঃ ১৪৬১]


৪৬/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

মুনাফিকের আলামত তিনটি- (১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং (৩) আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।

- [বুখারীঃ ৩৩; মুসলিমঃ ৫৯; বুলুগুল মারামঃ ১৪৮৫]


৪৭/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা, খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।"

- [বুখারীঃ ৫১৪৩; মুসলিমঃ ১৪১৩; তিরমিযীঃ ১৯৮৮]


৪৮/১০০. খাওলাহ আনসারীয়া (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি যে,

"কিছু লোক আল্লাহর দেয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।"

- [বুখারীঃ ৩১১৮; তিরমিযীঃ ২৩৭৪; বুলুগুল মারামঃ ১৪৯৩]


৪৯/১০০. হুযাফাহ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন

"চোগলখোর কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না।"

- [বুখারীঃ ৬০৫৬; মুসলিমঃ ১০৫; বুলুগুল মারামঃ ১৫০৫]


৫০/১০০. আবু সিরমাহ (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের ক্ষতি করবে প্রতিদানে আল্লাহ তা'আলাও তার ক্ষতি করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে কষ্ট দেবে আল্লাহ এর প্রতিদান তাকে কষ্ট দিবেন।"

- [আবু দাউদঃ ৩৬৩৫; তিরমিযীঃ ১৯৪০; বুলুগুল মারামঃ ১৫০১]


৫১/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"তোমাদের কারো খাদিম যখন তার খাবার নিয়ে আসে, তখন তাকে যদি সাথে না বসায়, তাহলে সে যেন তাকে এক লুকমা বা দু'লুকমা খাবার দেয়।"

- [বুখারীঃ ২৫৫৭; মুসলিমঃ ১৬৬৩]


৫২/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"উপরের হাত (দাতার হাত) নিচের (গ্রহীতার) হাত হতে উত্তম। তোমাদের প্রত্যেকই দান কার্য তার পোষ্যদের মধ্যে আরম্ভ করবে। এমন যেন না হয়, স্ত্রী বলতে বাধ্য হবে 'আমাকে খেতে দাও, না হয় তালাক দাও'।"

- [মুসনাদে আহমাদঃ ১১/৭২; সহীহুল জামেঃ ৪৪৮১; বুলুগুল মারামঃ ১১৪৬]


৫৩/১০০. আয়িয ইবনে আমর মুযানী (রা) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেন:

"ইসলাম উঁচু থাকবে, নীচু হবে না।"

- [দারকুৎনীঃ ৩১; বুলুগুল মারামঃ ১৩০৯]


৫৪/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তীতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।"

- [বুখারীঃ ৬১১৪; মুসলিমঃ ২৬০৯]


৫৫/১০০. সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি,

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন যে বান্দাহ ধর্মভীরু (পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে), মুখাপেক্ষাহীন (আল্লাহ ছাড়া কারো উপর নির্ভরশীল নয়) ও আত্মগোপনকারী (নিজের গুণ প্রকাশে অনিচ্ছুক)।"

- [মুসলিমঃ ২৯৬৫; আহমাদঃ ১৪৪৪]


৫৬/১০০. ইবনু আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল- অথচ তারা এটা পছন্দ করে না, কিয়ামতের দিন (যে কান লাগিয়ে কথা শুনেছে) তার উভয় কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়া হবে।"

- [বুখারীঃ ২২২৫; মুসলিমঃ ২১১০; তিরমিযীঃ ১৭৫১]


৫৭/১০০. বাহয ইবনু হাকিম (রা) হতে বর্ণিত । তিনি তার পিতা, তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"চরম সর্বনাশ ঐ ব্যক্তির জন্য যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলে থাকে। তার জন্য সর্বনাশ, তার জন্য সর্বনাশ।"

- [তিরমিযীঃ ২৩১৫; আবু দাউদঃ ৪৯৯০]


৫৮/১০০. মু'আবিয়াহ (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের 'ইলম' দান করেন।"

- [বুখারীঃ ৩১১৬; মুসলিমঃ ১০৩৭]


৫৯/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"এক মুমিন অন্য মুমিন ভাই এর জন্য আয়না তুল্য (দোষের কথা তাকে ধরিয়ে দিবে কিন্তু অন্যের কাছে তা গোপন রাখবে)।"

- [আবু দাউদঃ ৪৯১৮; তিরমিযীঃ ১৯২৯]


৬০/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"কোন মানবমন্ডলী কোন মজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকির করলে আল্লাহর ফেরেশতাগণ তাদেরকে ছেয়ে ফেলেন ও আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলেন। আর আল্লাহ তার নিকটতম ফেরেশতাদের মধ্যে তাদের সুখ্যাতি বর্ণনা করেন।"

- [মুসলিমঃ ২৭০০; তিরমিযীঃ ১৪২৫]


৬১/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"যে লোক প্রতিদিন একশতবার 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি' বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।"

- [বুখারীঃ ৩২৯৩; ইবনু মাজাহঃ ৩৭৯৮; তিরমিযীঃ ৩৪৬৬]


৬২/১০০. আবু মূসা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"হে আব্দুল্লাহ ইবনু কাইস। আমি কি তোমাকে এমন একটি কথার সন্ধান দেব না যে কথাটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার ? তা থেকে একটি রত্নভান্ডার হলো 'লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'।"

- [বুখারীঃ ২৯৯২; মুসলিমঃ ২৭০৪]


৬৩/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"দুটি কালিমাহ আছে, যেগুলো দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়, মুখে উচ্চারণ করা খুবই সহজ। দাঁড়িপাল্লায় অত্যন্ত ভারী। (বাণী দুটি হচ্ছে) 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম'।

- [বুখারীঃ ৬৪৬; বুলুগুল মারামঃ ১৫৬৮]


৬৪/১০০. আনাস (রা) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণিত:

"কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যদি তা যথাযথ ভাবে আদায় করা হয়, তাহলে তার আমল যথার্থ বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সমস্ত আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।"

- [মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহাঃ ১৩৫৮]


৬৫/১০০. উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত:

"একজনের খাবার দুইজনের জন্য যথেষ্ট, দুইজনের খাবার তিনজন এবং চারজনের জন্য যথেষ্ট। আর চারজনের খাবার পাঁচজন এবং ছয়জনের জন্য যথেষ্ট।"

- [বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আস-সহীহাঃ ১৬৭৬]


৬৬/১০০. জাবির (রা) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"তোমরা কবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকো, (লোকদেরকে) পথ দেখাও এবং সুসংবাদ দাও ।"

- [মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহাঃ ৮৮৫]


৬৭/১০০. আবু যার (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত:

"সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।"

- [ইবনু হিব্বান, আস-সহীহাঃ ১৪৯০]


৬৮/১০০. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

"একদিন (রাসূলুল্লাহ সা.) আমার দেহের কোন এক অংশে ধরে বললেন, তুমি (এমনভাবে) আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি তাকে দেখছ এবং দুনিয়াতে প্রবাসী কিংবা মুসাফিরের ন্যায় জীবনযাপন করো।"

- [মুসনাদে আহমাদ, আস-সহীহাঃ ১৪৭৩]


৬৯/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা) কে বলতে শুনেছিঃ

"আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করি।"

- [বুখারীঃ ৬৩০৭; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১৪]


৭০/১০০. আবু নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযায়ী (রা) হতে বর্ণিত যে,

"জুহাইনা গোত্রের একটি নারী আল্লাহর রাসূল (সা) এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিলো। সে বললে, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি দন্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি, তাই আমাকে আপনি শাস্তি দিন।'

সুতরাং আল্লাহর নবী (সা) তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, "তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখো এবং সন্তান প্রসবের পর আমার নিকট নিয়ে এসো।"

সুতরাং সে তাই করলো (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল (সা) এর নিকট নিয়ে এলো)।

আল্লাহর নবী (সা) তার কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন।

অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন।

অতঃপর তিনি তার জানাযার সালাত পড়ালেন।

উমার (রা) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! আপনি এই মেয়ের জানাযার সালাত পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিলো?

তিনি বললেন, '(উমার! তুমি জানো না যে) এই স্ত্রীলোকটি এমন বিশুদ্ধ তাওবা করেছে, যদি তা ৭০টি লোকের মধ্যে বন্টন করা হত তা তাদের জন্য হতো। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম কাজ পেয়েছে যে, সে আল্লাহর জন্য প্রাণকে কুরবান করে দিল?"

- [মুসলিমঃ ১৬৯৬; তিরমিযীঃ ১৪৩৫; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২৩]


৭১/১০০. আবু সাবেত, মতান্তরে আবু সাঈদ বা আবুল অলীদ সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) হতে বর্ণিত, নাবী (সা) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদাত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ তা'আলা শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়।"

- [মুসলিমঃ ১৯০৯; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ৫৮]


৭২/১০০. আবু যার জুন্দুব বিন জুনাদাহ (রা) ও মুআজ ইবনে জাবাল (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"তুমি যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং পাপের পর পুণ্য করো, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।"

- [তিরমিযীঃ ১৯৮৭; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ৬২]


৭৩/১০০. উমার (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি,

" যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখো, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মতো রুযী দান করবেন, যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে।"

- [ইবনু মাজাহঃ ৪১৬৪; তিরমিযীঃ ২৩৪৪; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ৮০]


৭৪/১০০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) অবশ্যই তুচ্ছ না ভাবে। যদিও তা ছাগলের খুর হয়।"

- [বুখারীঃ ৬০১৭; মুসলিমঃ ১০৩০; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১২৬]


৭৫/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

"আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।"

জিজ্ঞেস করা হলো, "হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে ?"

তিনি বলেন, "যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।"

- [বুখারীঃ ৭২৮০; মুসলিমঃ ১৮৩৫]


৭৬/১০০. আয়িশা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল' যা তার (ইসলামের) মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ২৬৯৭; মুসলিমঃ ১৭১৮; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১৭৩]


৭৭/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন:

"যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে । এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।"

- [মুসলিমঃ ২৬৭৪; আবু দাউদঃ ৪৬১৯]


৭৮/১০০. আবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি:

"তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয় । যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে) । যদি (তাতে) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ৯৫৬; মুসলিমঃ ৪৯]


৭৯/১০০. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন,

তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাকো।

সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূূল! সে মজলিসে না বসলে তো আমাদের উপায় নেই; আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, যখন তোমরা (সেখানে) না বসে পারবেই না, তখন তোমরা রাস্তার হক আদায় করো।

তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?

তিনি বললেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করা।

- [সহীহুল বুখারীঃ ২৪৬৫; মুসলিমঃ ১২১১; আহমাদঃ ১০৯১৬]


৮০/১০০. আবু যায়দ উসামাহ ইবনে যায়দ ইবনে হারেসাহ (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি,

"কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে । অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বেড় হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারপাশে ঘুরতে থাকে । তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, 'ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন ? তুমি না (আমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?'সে বলবে, 'অবশ্যই! আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ২৬৮২; মুসলিমঃ ৫৯; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২০৩]


৮১/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন,

তোমরা কি জানো নঃস্ব কে?

তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যেই নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোন আসবাব-পত্র নেই।

তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে (কিন্তু এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে)। সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো মাল (অবৈধভাবে) ভক্ষণ করেছে, কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে।

অতঃপর এ (অত্যাচারিত) কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিতকে) তার নেকী দেওয়া হবে।

পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবি পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার (অত্যাচারী ব্যক্তির) উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

- [মুসলিম, তিরমিযী, রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২২৩]


৮২/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন:

"যে দুনিয়াতে কোন বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।"

- [মুসলিমঃ ২৫৯০; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২৪৫]


৮৩/১০০. আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হবে।"

- [মুসলিমঃ ১৪৬৯; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ২৮০]


৮৪/১০০. আবু হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সা) বলেন:

"প্রতিদিন সকালে দু'জন ফিরিশতা অবতরণ করেন । তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন । আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।"

- [মুসলিমঃ ৯৯৬; আবু দাউদঃ ১৬৯২]


৮৫/১০০. আবু সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনে মা'বাদ জুহানী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে সালাত শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে তার জন্য তাকে প্রহার করো।"

- [তিরমিযীঃ ৪০৭; আবু দাউদঃ ৪৯৪]


৮৬/১০০. আনাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,

"যে ব্যক্তি চায় যে, তার রূযী (জীবিকা) প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ২০৬৭; মুসলিমঃ ২৫৫৭]


৮৭/১০০. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেন,

"মুমিন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং তোমার খাবার যেন পরহেজগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ না খায়।"

- [তিরমিযীঃ ২৩৯৫; আবু দাউদঃ ৪৮৩২]


৮৮/১০০. আবু মূসা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেন:

"মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালোবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।"

- [রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ৩৭২]


৮৯/১০০. মুআয (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি,

"আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালোবাসা স্থাপন করবে, তাদের (বসার) জন্য হবে নূরের মিম্বর; যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।"

- [তিরমিযীঃ ২৩৯০; আহমাদঃ ২১৫২৫]


৯০/১০০. মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,

"আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ায় দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।"

- [মুসলিমঃ ২৮৫৮; তিরমিযীঃ ২৩২৩]


৯১/১০০. কা'ব ইবনে মালেক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশি ক্ষতিকারক।"

- [তিরমিযীঃ ২৩৭৬; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ৪৮৯]


৯২/১০০. ইবনে আব্বাস ও ইমরান হুস্বাইন (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেন:

"আমি বেহেস্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ৩২৪১; মুসলিমঃ ২৭৩৮]


৯৩/১০০. আবদুল্লাহ আমর ইবনুল আ'স (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রূযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।"

- [মুসলিমঃ ১০৫৪; তিরমিযীঃ ২৩৪৮]


৯৪/১০০. ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত, নবী (সা) বলেছেন:

"কেবলমাত্র দু'টি বিষয়ের ঈর্ষা করা যায়ঃ (১) ঐ ব্যক্তির যাকে আল্লাহ কুরআন (শিক্ষা) দিয়েছেন অতঃপর সে দিবারাত্রি তার যত্ন (তিলাওয়াত ও আমল) করে এবং (২) ঐ ব্যক্তির যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর সে দিবারাত্রি তা দান করে।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ৫০২৫; মুসলিমঃ ৮১৫]


৯৫/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন:

"তোমরা অতি সত্বর নেতৃত্বের লোভ করবে। (কিন্তু স্মরণ রাখো) এটা কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ৭১৪৮; নাসায়ীঃ ৪২১১]


৯৬/১০০. আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"শোন! তোমাদের দাজ্জাল সম্পর্কে আমি কি এমন কথা বলবো না, যা কোন নবীই তাঁর জাতিকে বলেন নি? তা হলো এই যে, সে হবে কানা আর সে নিজের সাথে নিয়ে আসবে জান্নাত ও জাহান্নামের মতো কিছু। যাকে সে জান্নাত বলবে, বাস্তবে সেটা জাহান্নাম হবে।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ৩৩৩৮; মুসলিমঃ ২৯৩৬]


৯৭/১০০. আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

“দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করলে মুমিনদের একজন তার নিকট যাবে। পথে তার সাথে দাজ্জালের পাহারাদারদের দেখা হলে, তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে: কোথাকার ইচ্ছায় বেরিয়েছ? সে বলবে: আমি এই আত্মপ্রকাশকারী ব্যক্তির কাছে যেতে চাই। তারা বলবে: আমাদের প্রভুর প্রতি কি তুমি ঈমান রাখ না? সে বলবে: আমাদের প্রভুর ব্যাপারে তো অপ্রকাশ্য কিছু নেই। তারা বলবে: একে হত্যা কর। অতঃপর তাদের কিছু লোক অন্য কিছু লোককে বলবে: তোমাদের প্রভু কি তোমাদেরকে তার অনুমতি ব্যতীত কাউকে হত্যা করতে নিষেধ করেনি? ফলে তারা তাকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। যখন মুমিন লোকটি দাজ্জালকে প্রত্যক্ষ করবে তখন বলবে: হে লোকসকল! এ সেই দাজ্জাল যার আলোচনা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন। অতঃপর দাজ্জালের আদেশে তাকে উপুড় করে শোয়ানো হবে। দাজ্জাল বলবে: ওকে ধরে তার পিঠ ও মাথায় প্রহার কর। তাকে প্রহার করার কারণে তার পেট ও পিঠ চওড়া হয়ে যাবে। সে বলবে: তুমি কি আমাকে বিশ্বাস কর না? সে বলবে: তুমি তো মিথ্যাবাদী মাসীহ দাজ্জাল। অতঃপর তার হুকুমে মুমিন ব্যক্তির মাথার সিঁথি থেকে দু’পায়ের মধ্য পর্যন্ত করাত দিয়ে চিরে দু’টুকরো করে দেয়া হবে। অতঃপর দাজ্জাল দুই টুকরার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাবে এবং লাশকে সম্বোধন করে বলবে: উঠ। তখন সে পূর্ণরূপে (জীবিত হয়ে) উঠে দাঁড়াবে। অতঃপর (দাজ্জাল) তাকে জিজ্ঞেস করবে: তুমি কি আমার প্রতি ঈমান এনেছ? সে বলবে: তোমার সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পেল। তারপর বলবে: হে লোকেরা! এ দাজ্জাল আমার পরে মানুষের মধ্য হতে আর কারো কোন কিছু করতে পারবে না। অতঃপর দাজ্জাল তাকে যবেহ্ করার জন্য ধরবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তার গর্দান থেকে গলার নিচের হাড়ের মধ্যমাংশকে পিতলে পরিণত করবেন। ফলে সে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। শেষে সে তার দু’হাত ও দু’পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। এ দেখে লোকেরা ধারণা করবে যে, তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল। বাস্তবে তাকে জান্নাতে ফেলা হলো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: নিখিল বিশ্বের প্রতিপালকের নিকট এই ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় শহীদ।”

- [বুখারী: ৭১৩২, মুসলিম: ২৯৩৮]


৯৯/১০০. আবু হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন:

"কিয়ামত ততোদিন পর্যন্ত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে। এমনকি ইহুদী পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলে পাথর ও গাছ বলবে, 'হে মুসলিম! আমার পেছনে ইহুদী রয়েছে। এসো, ওকে হত্যা করো। কিন্তু গারক্বাদ গাছ (এরূপ বলবে) না। কেননা এটা ইহুদীদের গাছ।"

- [সহীহুল বুখারীঃ ২৯২৬; মুসলিমঃ ২৯২২; রিয়াদুস স্বা-লিহীনঃ ১৮২৯]


৯৮/১০০. আমর ইবনু আবাসা (রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত-

" সর্বোত্তম হিজরত হলো আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা বর্জন করা ।"

- [আস-সহীহাঃ ৫৫৩]


১০০/১০০. হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত।তিনি বলেছেন:

এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলল,

“ইয়া রাসুলুল্লাহ্! আল্লাহ্-র কসম! আমি নিশ্চয়ই আপনাকে ভালোবাসি।”

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

“তুমি কী বলছো তা চিন্তা-ভাবনা করে দেখ।”

সে বলল, “আল্লাহ্-র কসম!নিশ্চয়ই আমার ভালোবাসা আপনার জন্য।”

এরূপ সে তিনবার বলল।

এরপর তিনি বললেন,
“তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেই থাকো তাহলে দারিদ্রের জন্যে মোটা পোশাক তৈরী করে নাও।কারণ বন্যার পানি যে গতিতে তার শেষ গন্তব্যের দিকে পৌঁছে যায়,আমাকে যে ভালোবাসে দারিদ্র ও নিঃস্বতা তারচেয়েও দ্রুত গতিতে তার দিকে ধাবিত হয়।”

- [তিরমিযী, রিয়াদুস সলিহীনঃ ৪৮৮]

No comments:

Post a Comment

সম্পর্কিত পোষ্টসমূহ