কবিরা গুনাহ কি ? এ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় কি ?

কবিরা গুনাহ কি ? এ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় কি ?

কাবীরা গুনাহের আভিধানিক অর্থ বড় গুনাহ ।

আর শারী’আতের পরিভাষায় আল্লাহ ও তাঁর রসূল যে সকল কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং সে সকল কাজের জন্য শাস্তির বিধান অথবা আল্লাহর রাগের কথা ঘোষণা রয়েছে, তাকে কাবীরা গুনাহ বলা হয়।

গুনাহ দু’ভাগে বিভক্ত- প্রথমত কাবীরা; দ্বিতীয়ত সাগীরা। কেউ কেউ বলেছেন, মূলত সব গুনাহই- গুনাহ, এর কোন বিভাগ নেই। তবে মুহাক্কিক উলামায়ি কিরামের মতে গুনাহ দু’প্রকার। সাগীরা গুনাহ ও কাবীরা গুনাহ।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ



;إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا ﴿النساء٣١﴾ 

যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের ক্রটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা আন-নিসা-৩১)


কবীরা গুনাহসমূহের সংখ্যা 

কুরআন ও হাদীসে কাবীরা গুনাহের পূর্ণ সংখ্যার বর্ণনা এক সাথে উল্লেখ নেই। তবে কুরআনে ও হাদীসে যে সকল গুনাহকে কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, উলামায়ি কিরাম এর সংখ্যা ৭০টি বলে বর্ণনা করেছেন। আবার তাঁদের কেউ কেউ তার সংখ্যা এর চেয়ে অধিক বলেও উল্লেখ করেছেন।


■■ কবীরা গুনাহঃ 

কবীরা গুনাহ বলা হয় ঐ সকল বড় বড় পাপকর্ম সমূহকে যেগুলোতে নিন্মোক্ত কোন একটি বিষয় পাওয়া যাবে:

● যে সকল গুনাহের ব্যাপারে ইসলামে শরীয়তে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

● যে সকল গুনাহের ব্যাপারে দুনিয়াতে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগের কথা রয়েছে।

● যে সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা রাগ করেন।

● যে সকল কাজে আল্লাহ তায়ালা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ফেরেশতা মণ্ডলী লানত দেন।

● যে কাজের ব্যাপারে বলা হয়েছে, যে এমনটি করবে সে মুসলমানদের দলভুক্ত নয়।

● কিংবা যে কাজের ব্যাপারে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

● যে কাজে দ্বীন নাই, ঈমান নাই ইত্যাদি বলা হয়েছে।

● যে ব্যাপারে বলা হয়েছে এটি মুনাফিকের আলামত বা মুনাফিকের কাজ।

অথবা যে কাজকে আল্লাহ তায়ালা সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় করা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


কাবীরা গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ঃ 

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ



قُلْ يَـٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ 

“আপনি বলুন, হে বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমাত হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব পাপ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আযযুমার-৫৩)

মূলত একনিষ্ঠ তাওবাহর মাধ্যমে সকল গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করা যায় তবে এ জন্য চারটি শর্ত রয়েছে। যেমন, (১) আন্তরিকভাবে খালিস নিয়্যতের সহিত অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া; (২) ভবিষ্যতে আর ঐ গুনাহ না করার ওয়াদাহ করা; (৩) অবিলম্বে উক্ত গুনাহ একেবারেই ত্যাগ করা; (৪) গুনাহর সাথে মানুষের অধিকার জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি জীবিত থাকে তবে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে বা তার উত্তরাধিকারীদেরকে সন্তোষজনক ক্ষতিপূরণ দান। এই চারটি শর্ত পালনপূর্বক ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


■■ কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদাঃ 

১. মহান আল্লাহ বলেন:



إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا 

“যেগুলো স¤পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” (সূরা নিসা: ৩১)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:



الصلوات الخمس . والجمعة إلى الجمعة . ورمضان إلى رمضان . مكفرات ما بينهن إذا اجتنب الكبائر 

“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআ থেকে আরেক জুমআ এবং এক রামাযান থেকে আরেক রামাযান এতদুভয়ের মাঝে সংঘটিত সমস্ত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ যায় যদি কবীরা গুনাহ সমূহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।” (মুসলিম)


সাগীরা গুনাহ থেকেও সাবধান! 

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, হে লোকসকল! তোমরা এমন সমস্ত কাজ করে থাক যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চাইতেও সূক্ষ্ণ। অথচ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সময়ে আমরা সেগুলোকে ধ্বংসাত্নক মনে করতাম। (বুখারী, মিশকাত হাঃ ৫১২৩)

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, হে আয়িশাহ! তুমি ঐসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ক্ষুদ্র ধারণা করা হয়। কেননা, এ সমস্ত ছোট ছোট গুনাহগুলোর খোঁজ রাখার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে (মালাইকা) নিয়োজিত রয়েছেন। (ইবনু মাজাহ, দারেমী ও বায়হাকী, মিশকাত হাঃ ৫১২৪)

No comments:

Post a Comment

সম্পর্কিত পোষ্টসমূহ