লাইলাতুল ক্বদর ও বিশেষ দো'আ

লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ করা :

এক শ্রেণীর মুসলমান মহিমান্বিত রজনী তথা ক্বদরের রাত হিসাবে ২৭শে রামাযানের রাতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে এবং এই রাতে প্রতি মসজিদে মুছল্লীদের ঢল নামে। সারারাত্রি ছালাত আদায় করা হয়। এক শ্রেণীর আলেম সাধারণ মুসলমানের মধ্যে এ তারিখে ইবাদত করার বিষয়টি প্রচার করে থাকে এবং কেবল এই একটি রাতেই ছালাত আদায় ও কুরআন তেলাওয়াতের নির্দেশ দেয়, যা সঠিক নয়।


عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ-

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা শবে ক্বদর তালাশ করবে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে’।[1]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْمَنَامِ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ-
ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের কয়েকজনকে স্বপ্নে দেখানো হ’ল, শবে ক্বদর (রামাযানের) শেষের সাত রাত্রির মধ্যে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি দেখেছি তোমাদের সকলের স্বপ্নই একইরূপ শেষ সাত রাত্রিতে সীমাবদ্ধ। সুতরাং যে তা অন্বেষণ করে সে যেন শেষ সাত রাত্রিত অন্বেষণ করে’।[2]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنهما أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى تَاسِعَةٍ تَبْقَى، فِى سَابِعَةٍ تَبْقَى، فِى خَامِسَةٍ تَبْقَى-
ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তালাশ করবে তা (শবে ক্বদর) রামাযানের শেষ দশকে মাসের নয় দিন বাকি থাকতে, সাত দিন বাকি থাকতে, পাঁচ দিন বাকি থাকতে’।[3]
লাইলাতুল ক্বদরের ফযীলত : 
লাইলাতুল ক্বদরে ইবাদত হাযার মাস ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ، لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ، تَنَزَّلُ الْمَلاَئِكَةُ وَالرُّوْحُ فِيْهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّنْ كُلِّ أَمْرٍ، سَلاَمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ-
‘নিশ্চয়ই আমি একে (কুরআনকে) মহিমান্বিত রজনীতে নাযিল করেছি। মহিমান্বিত রজনী কি, তা কি আপনি অবগত আছেন? মহিমান্বিত রজনী হাযার মাস অপেক্ষাও উত্তম। সে রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রতিটি কাজের জন্য অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। শান্তিপূর্ণ সেই রজনী; তা ফজরের উদয়কাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে’(ক্বদর ১-৫)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيْمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ‘যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও ছওয়াবের আশায় ক্বদরের রাত্রিতে জেগে নফল ইবাদত করবে তার পূর্বকৃত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’।[4]
লাইলাতুল ক্বদরের বিশেষ দো‘আ
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে পড়ার জন্য নিম্নের দো‘আটি শিক্ষা দিয়েছিলেন।-

اَللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي



উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা ‘আফুববুন তোহিববুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী’


অর্থ: (হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা কর)



(আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২০৯১, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়-৭, অনুচ্ছেদ-৮)

[1].বুখারী হা/২০১৭; মিশকাত হা/২০৮৩
[2].বুখারী হা/২০১৫; মিশকাত হা/২০৮৪
[3].বুখারী হা/২০২১; মিশকাত হা/২০৮৫।
[4]. বুখারী হা/৩৫; মুসলিম হা/৭৬০।

No comments:

Post a Comment

সম্পর্কিত পোষ্টসমূহ