মীলাদ ও মীলাদুন নবী : ইসলাম কী বলে?

মীলাদ ও মীলাদুন নবী : ইসলাম কী বলে?

আমরা যারা বর্তমান সময়ের মুসলমান, ইসলামের প্রতি আমাদের মৌখিক ভালোবাসা যতোটা প্রগাঢ়; বাস্তবে তার প্রতি আমাদের অবহেলা তার চেয়েও অনেক গুণ বেশী। তাই আমরা ইসলামকে যতোটুকু ভালোবাসি, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশী তার বিধি-বিধান উপেক্ষা করি। আর এর অন্যতম কারণ হলো, দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের উদাসীনতা।

আমরা “ইসরাঈল আমেরেকিা নিপাত যাক” বলে গলা ফাটিয়ে মিছিল করে তাদেরই ‘পেপসি’-‘কোক’ পান করে বুকটা ঠাণ্ডা করি। অথচ আমরা জানিনা যে, এ পেপসি কোকের মূল্য হিসেবে দেয়া অর্থ দিয়েই তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ফিলিস্তিন, ইরাক ও আফগানিস্তান সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন নারী-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অসংখ্য মুসলমানদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে চলছে।

দ্বীন ইসলামের ব্যপারে এমন অজ্ঞতা আর উপেক্ষার কারণেই আমরা মুসলমানরা আজ ইসলামের নামে “মুহাম্মাদ (স.) কে সৃষ্টি করা না হলে আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি হতো না,” “মুহাম্মাদ (স.) নূরের সৃষ্টি,” “মিলাদ মাহফিলে তিনি উপস্থিত হন,” “তিনি হায়াতুন নবী” এমন অনেক বানোয়াট কথায় বিশ্বাস করি; ‘শবে বরাত’, ‘শবে মিরাজ’, ‘জুম‘আতুল বিদা’, ‘মিলাদ’ ও ‘ঈদে মিলাদুন নবীর’ মতো অসংখ্য অনুষ্ঠান উদযাপন করে সওয়াবের নিয়তে পরিশ্রম করে গুনাহ অর্জন করি। ‘দোয়ায়ে গঞ্জে আরশ’, ‘দরুদে নারিয়া’, ‘দরূদে হাজারী’ ইত্যাদি ধরনের বেদ‘আতী ও শিরকী দরূদ সওয়াবের উদ্দেশ্যে পাঠ করি।

কথাগুলো শুনতে আপনার কাছে যতোই আজব মনে হোক না কেন, আসলে ব্যাপারগুলো তিক্ত হলেও বাস্তব সত্য।

ইসলামের নামে আমাদের বর্তমান সমাজে এমন অসংখ্য বিশ্বাস, নিয়ম-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, এবাদত-বন্দেগী চালু রয়েছে, বাস্তবে যেগুলোর সাথে ইসলামের, আল্লাহর, তাঁর রসূলের, কুরআনের, ও বিশুদ্ধ সুন্নাহ্‌র কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ এ কাজগুলোকে আমরা তথাকথিত “ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের” মধ্য দিয়েই উদ্‌যাপন করে থাকি। ঠিক এমনই একটি অনুষ্ঠান আমাদের সামনে সমাগত; যার নাম হলো ‘ঈদে মিলাদুননবী’।

আপনি হয়তো খুবই আশ্চর্য হচ্ছেন যে, যুগ যুগ ধরে পালন করে আসা ঈদে মিলাদুন নবীর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই—এটা আবার কেমন কথা?

আমি আপনাকে অনুরোধ করবো—উত্তেজিত না হয়ে, বরং আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে বুদ্ধি-জ্ঞান নামক যে মহান নিয়ামতটি দান করেছেন, সেটিকে সক্রিয় করুন, লেখাটি ধৈর্যের সাথে সম্পূর্ণ পড়ুন। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছে সঠিক বুঝ দানের জন্য আন্তরিকভাবে সাহায্য কামনা করুন।

ইসলাম ইহুদী-খ্রীষ্টান-হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ ইত্যাদি ধর্মের মতো প্রচলিত অর্থে কোনো ধর্ম নয়; বরং ইসলাম একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। একজন মানুষ তার জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দিন রাতের ২৪ ঘন্টা সময়ে যা কিছু করবে সে ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। এক্ষেত্রে আমাদের জীবনের দু’টি দিক রয়েছে।

একটি হলো আমাদের দৈনন্দিন কর্মকান্ড, যেমন খাওয়া-দাওয়া, চাকরি-বাকরি, বেচাকেনা, ব্যবসা বাণিজ্য, ইত্যাদি সম্পর্কিত। এগুলোকে ফিকহের পরিভাষায় বলা হয় মু‘আমালাত। এই ধরনের কাজকর্মের ব্যাপারে ইসলামের মূলনীতি হলো যতোক্ষণ কোনো জিনিষকে বা কোনো কাজকে ইসলাম হারাম না ঘোষণা না করবে ততোক্ষণ তা হালাল। যেমন ধরুন, শসা, গাজর, ফুলকপি, চা বিস্কুট, কফি ইত্যাদি খাওয়া যে হালাল তা আপনি কোথায় পেলেন? আইটি ফার্ম দেওয়া, কম্পিউটার বিক্রি, মুদির দোকান, পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা ফিশারিজ ইত্যাদি নানা ধরণের ব্যবসা বা চাকরি দেয়া যে জায়েয তা আপনি পেলেন কোথায়? কোরআনে বা হাদীসে সুনির্দিষ্টভাবে এগুলোকে কোথাও তো হালাল বা জায়েয বলা হয়নি!

আসলে এগুলো হালাল এবং জায়েয এ জন্যই যে, এগুলোকে কোরআন হাদীসে কোথাও হারাম বলা হয়নি। এসব ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা না থাকার অর্থই হলো কাজটি বৈধ; আর হারাম না বলার অর্থই হলো জিনিষটি হালাল।

অপর দিকে ইসলামী শরি‘আহ্‌য় এমন কিছু হুকুম আহকাম রয়েছে যেগুলো সরাসরি আল্লাহর এবাদত সংশিষ্ট। এগুলোর মধ্যে দুনিয়ার জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে বৈষয়িক কোনো সম্পর্ক নেই; এগুলো শধুই আল্লাহর ইবাদত। যেমন সলাত, সিয়াম, হজ্জ, দোয়া, যিকির-আযকার তাসবীহ-তাহলীল, নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠানো ইত্যাদি। এধরনের ইবাদাতসমূহের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো—যে এবাদতটি যখন-যেভাবে-যতোটুকু করতে বলা হয়েছে ঠিক তখন-সেভাবে-ততোটুকুই করতে হবে। কোরআনে কিংবা সহীহ সুন্নাহ্‌র বর্ণনা ছাড়া নিজেদের মন মতো কোনো নিয়ম-কানুন বানিয়ে নেয়া যাবে না; বাহ্যিকভাবে দেখতে যতোই ভালো মনে হোক না কেন।

যেমন ধরুন, সলাতের জন্য যে সময়সূচী ইসলামে নির্ধারণ করে দেয়া আছে আপনি যদি তা না মানেন, আপনি যদি সকাল ১০টার সময় যোহরের সলাত পড়েন তবে তা কি হবে? কিংবা আপনি যদি মনে করেন, সারা রাত ঘুমিয়ে থেকে ফজরের ফরয মাত্র দু’রাকাত পড়বো কেন? চার রাকাতই পরি। তাহলে কি আপনার সলাত হবে? হবে না। অথচ হবে না কেন, আপনি তো খারাপ কিছু করেননি, সলাতই তো পড়েছেন, আল্লাহ তা’য়ালাই তো সলাত পড়তে বলেছেন!

কিংবা যেভাবে রসূল (স.) শিখিয়েছেন সেভাবে আদায় না করে যদি অন্য কোনোভাবে সলাত আদায় করেন তাহলে কি সে সলাত হবে? আপনি যদি আগে সেজদা, পরে রুকু, তারপর কেরাত পড়েন তাহলে কি সলাত হবে? বরং আপনার রুকু-সেজদা সঠিক ভাবে আদায় হওয়া সত্ত্বেও ধারাবাহিকতা ভংগের কারণে সেই সলাত হবে না।

কোনো ইবাদত কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ্‌য় সময়-ক্ষণ, ধরণ-প্রক্রিয়া বা সংখ্যা ইত্যাদি নির্ধারণ ছাড়া সাধারণভাবে বর্ণিত থাকলে সেক্ষেত্রে যেভাবে বর্ণিত সেভাবেই আদায় করতে হবে। কোনো কিছু বিন্দু পরিমাণ বাড়ানোও যাবে না, মন মতো সময় নির্ধারণ করা যাবে না, পরিমাণ বা সংখ্যাও নিজের ইচ্ছা মতো নির্ধারণ করা যাবে না। আবার যদি সংখ্যা বা সময় নির্ধারিত থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধনও করা যাবে না। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের পর ৩৩ বার সুবহান আল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং শততম বারে সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার অথবা আল্লাহু আকবা ৩৪ বার পাঠের বর্ণনা সহীহ হাদীসে রয়েছে।

এখন কেউ যদি বলে যে, আমি প্রত্যেকটি তাসবীহ ৩৩ বার নয় বরং নিয়মিত একশত বার করে পাঠ করবো, তাহলে তার তাসবীহের সংখ্যা বেশী হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর রসুলের নির্ধারিত সংখ্যা বাদ দিয়ে মনগড়া সংখ্যা নির্ধারণের কারণে তার আমলটি বেদ‘আতী আমল হিসেবে পরিতাজ্য হবে।

রসূল (স.) এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠানো হলো আল্লাহর ইবাদতসমূহের মধ্যে একটি ইবাদত। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর দরূদ ও সালাম পাঠায়; অতএব হে ইমানদাররা, তোমরাও তার উপর দরূদ ও সালাম পাঠাও। (সূরা আল আহযাব, আয়াত ৫৬)

ঠিক যেমনি সলাত কায়েমের নির্দেশ কোরআনে দিলেও, তা আদায়ের পদ্ধতি রয়েছে সুন্নাহ্‌য়, তেমনি দরূদ পাঠের নির্দেশ কুরআনে এলেও কিভাবে তা পাঠ করতে হবে তা আমাদেরকে রসূল (স.) ই শিক্ষা দিয়েছেন। কোন্‌ বাক্য দ্বারা কী পদ্ধতিতে দরূদ পাঠাতে হবে তা আল্লাহর রসূলের হাদীসেই আমরা খুজে পাই।

বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য সহীহ বর্ণনাসমূহে এ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য এসেছে তার সারমর্ম হলো, রসূলের উপর দরূদ ও সালাম পাঠানোর হুকুম সম্বলিত আয়াত নাযিল হওয়ার পর সাহাবীরা আল্লাহর রসূল (সা) কে জিজ্ঞাসা করেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহ তা’য়ালা আপনার উপর দরূদ ও সালাম পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন, আপনি আমাদের শিখিয়ে দিন আমরা আপনার উপর কিভাবে দরূদ ও সালাম পাঠাবো?” রসূল (স.) তখন তাদেরকে বলেন, “তোমরা বলবে, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদ.....আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া ...

যে দরূদকে আমরা দরূদে ইবরাহীম হিসেবে জানি ও প্রত্যেক সলাতে তাশাহ্‌হুদ বৈঠকে পড়ে থাকি এটাই হলো রসূল (স.) এর শেখানো দরূদ। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের বর্ণনায় শব্দগত সামান্য কিছু হেরফের থাকলেও ভাবগত দিক থেকে এই দরূদগুলোর সবগুলোরই মর্ম এক ও অভিন্ন। তাই দরূদ পাঠ করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সেইসব বর্ণনাসমূহের মধ্য থেকে যে কোনো একট অনুসারে পাঠ করতে হবে।

আল্লাহর রসূলের উপর দরূদ পাঠানোর ব্যাপারে স্বয়ং তাঁর শিখিয়ে দেয়া পদ্ধতি এটাই। তিনি এই দরূদ পাঠানোর জন্য যেমন জলসা বৈঠক করার মতো কোনো কিছু শিখাননি; ওয়া লাম্মা তাম্মা মিন হামলিহী..... সল্লাল্লা ওয়া ‘আলা মুহাম্মাদ.... ইয়া নবী সালাম আলাইকা.... জাতীয় কিছু শিখাননি। এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়-ক্ষণ বা লগ্ন নির্ধারণ করেননি। আর তার জন্ম দিনকেও ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালনের কোনো নির্দেশনা দেননি।

ঈদ সম্পর্কে তিনি যা বলেছেন সে ব্যপারে আনাস বিন মালেক (রা.) বলেন, জাহেলী যুগে (মদীনার) লোকেরা দু'টো দিনে ঈদ ও আনন্দ উৎসব করতো। রসূলুল্লাহ (স.) মদীনায় এসে এটা দেখে বললেন, তোমরা যে দু’দিন আনন্দ উৎসব করতে আল্লাহ তা’য়ালা তার পরিবর্তে তোমাদেরকে অনেক উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন; আর তা হলো, ‘ঈদুল আযহা’ (কোরবানীর ঈদ) ও ‘ঈদুল ফিৎর’ (রোযার ঈদ)। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)।

খ্রীষ্টানরা ঈসা (আ.) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে তাকেও যেভাবে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে, মহা জাঁক-জমক আর অপচয়ের মধ্য দিয়ে তার জন্মদিন উৎসব পালন করা শুরু করেছে—সেভাবে যেন আমরাও পথভ্রষ্ঠ না হয়ে যাই সেজন্য রসূলুল্লাহ (স.) আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন,

“তোমরা আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না যেভাবে খ্রীষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে নিয়ে করেছে; তোমরা শুধু আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল বলবে।” ( সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)

এই সাবধান বাণীর পাশাপাশি রসূল (স.) তাঁর উম্মতের মধ্যে জন্ম নেয়া এমন কিছু লোকদের ব্যপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যারা আল্লাহর রসূলের কঠোর সাবধান-বাণী সত্ত্বেও ইহুদী নাসারাদের অনুসরণ করবে। তিনি বলেন, “তোমরা (অর্থাৎ আমার উম্মতের কিছু লোক) পূর্ববর্তীদেরকে হুবহু অনুসরণ করবে, এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তে প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাই করবে। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ পূর্ববর্তীরা অর্থ কি ইহুদী নাসারারা? তিনি বললেন, তারা নয়তো আর কারা? (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) রসূলুল্লাহ (স.) আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করে, সে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হবে।”( মুসনাদে আহমদ ও আবু দাঊদ)

অতএব যারা ইহুদী নাসারাদের মতো নবী (স.) এর জন্ম উৎসব পালন করার মতো জঘন্য কাজ করবে, স্বয়ং তাঁর দৃষ্টিতে তাদের অবস্থান কোথায় তা আপনারাই বিচার করে দেখুন।

এই মিলাদ ও মিলাদুননবীকে যতোই জাঁকজমকপূর্ণ ইসলামী জলসা মনে হোকনা কেন সত্যিকার অর্থে এটা সম্পূর্ণরূপে বিদ‘আত। কারণ রসূলুল্লাহ (স.) কখনো এমন মিলাদ ও মিলাদুননবী বা জন্মবার্ষিকীর উৎসব পালন করেননি। তার সাহাবায়ে কেরামগণ—যারা তাকে প্রাণের চেয়ে বেশী ভালোবাসতেন, যারা তাকে কাফেরদের তীরের আঘাত থেকে বাচানোর জন্য নিজ শরীরকে ঢাল বানিয়ে তীরের আঘাতে আঘাতে ঝাঝড়া হয়ে গেছেন—তারা কখনো মিলাদ ও মিলাদুননবী পালন করেননি। শ্রেষ্ঠ তিন যুগ তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীনগণের কেউ কখনো মিলাদ বা মিলাদুননবী পালন করেননি। আয়েম্মায়ে মুজতাহেদীন ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমদ বিন হাম্বল ও ইমাম মালেক (র.) প্রমুখ কখনো করেননি। মক্কা মদীনা, দেওবন্দ সহ গোটা বিশ্বের সকল হক্কানী আলিমগণ এ মিলাদ ও ঈদে মিলাদুন্নবীকে বিদ‘আত আখ্যা দিয়েছেন। আর এ ব্যাপারে স্বয়ং রসূল (স.) বলেন,

সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কেতাব, সর্বোত্তম পথনির্দেশনা হচ্ছে মোহাম্মাদ (স.) এর পথনির্দেশনা, আর সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় হলো (দ্বীনের মধ্যে) নতুন উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ। (সহীহ মুসলিম)

তিনি আরও বলেন, “তোমরা আমার ও সুন্নাহ হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের উপর অটল থাকবে, তা আঁকড়ে ধরবে, মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। (দ্বীনের মধ্যে) নতুন আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ থেকে সাবধান! কেননা, (দ্বীনের মধ্যে) নতুন আবিষ্কৃত সকল বিষয়ই হলো বিদ‘আহ, আর সকল বিদ‘আহ্‌ই হলো পথভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা এর অংশ নয় তা প্রত্যাখ্যাত হবে”। (সহীহ বোখারী)

কেউ কেউ বলেন যে, মিলাদ ও মিলাদুন নবী হলো ‘বিদ‘আহ হাসানা’ বা উত্তম বিদ‘আহ। তাদের অবগতির জন্য বলবো, যেখানে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (স.) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে “কুল্লু বিদ‘আতিন দলালাহ” অর্থাৎ সকল বিদ‘আহ পথভ্রষ্টতা, সেখানে কোনো ব্যক্তি যদি বলে যে, “না না কিছু বিদ‘আহ আছে ভালো”, তাহলে সে কি স্বয়ং রসূলুল্লাহ (স.) এর সাথে চরম বেয়াদবী করলো না? সে কি নিজেকে আল্লাহর রসূলের চেয়েও অধিক জ্ঞানী বলে দাবী করলো না?

এ জন্যই ইমাম মালিক (র.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো বিদ‘আহ আবিষ্কার বা পালন করেও বলে যে এটা ‘বিদ‘আহ হাসানা বা উত্তম বিদ‘আহ’ সে যেন দাবী করলো যে মুহাম্মাদ (স.) তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালনে খিয়ানত করেছেন”।

আল্লাহ আমাদের এহেন জঘণ্য পাপাচার থেকে বিরত থাকার তাওফিক করুন। আমীন!!!

লেখকঃ আহমেদ রফিক


No comments:

Post a Comment

সম্পর্কিত পোষ্টসমূহ